উরুগুয়ের কাছে আবারো টাইব্রেকারে হেরে ব্রাজিলের বিদায় হল। কোপা আমেরিকা ২০২৪ এর সেমিফাইনালের লক্ষ্যে আজকে ভোর ৭ ঘটিকায় মাঠে নামে ব্রাজিল এবং উরুগুয়ে। পুরো ম্যাচে গোল শূন্য থাকতে হয় উভয় দলকে। অবশেষে খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে।
এডার মিলিটাও এবং ডগলাস লুইসের দুটি ব্যর্থ শটে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয় দরিবল জুনিয়রের দল ব্রাজিলকে। সর্বশেষ কাতার বিশ্বকাপে একইভাবে লুকা মদ্রিসের ক্রোয়েশিয়ার কাছে কোয়ার্টার ফাইনালে ট্রাইবেকারে হেরে বিদায় নিয়েছিল ব্রাজিল। এ যেন সেই কাতার বিশ্বকাপের রিম্যাচ।
কাতার বিশ্বকাপের পর থেকেই নিজেদের হারিয়ে খুঁজে ফেরা দলটি ব্যতিক্রম কিছু করতে পারেনি এবারের কোপা আমেরিকার আসরে। মূলত টাইব্রেকারের স্নায়ুচাপ সামলাতে ব্যর্থ ব্রাজিল। ৭৪ মিনিটে উরুগুয়ের মিডফিল্ডার নাহিতাস নান্দেজ লাল কার্ড দেখে মাঠ ছেড়ে গেলেও ১০ জনের উরুগুয়ের গোলপোস্টে বল ঢুকাতে ব্যর্থ ব্রাজিলিয়ান এন্ড্রিক রাফিনহারা।
দরিবল জুনিয়রের শিশ্যরা মনে হচ্ছে নিজেদের হারিয়ে খোঁজার চেষ্টা করছে। কিন্তু মাঝ মাঠে ব্রাজিলের দুর্বলতা হারে হারে টের পাওয়া গিয়েছে। যার বিপরীতে ট্রাইবেকারে উরুগুয়ে ৪-২ গোলে জয়লাভ করে সেমিফাইনালে চলে গিয়েছে।
পুরো ম্যাচের ৯০ মিনিট এবং এক্সট্রা ৫ মিনিট ছিল উত্তেজনা পূর্ণ। উভয় দলই নিজেদের সেরা দিয়ে খেলার চেষ্টা করেছে। দুই দল বারবার এটাকে ওঠার চেষ্টা করেছে কিন্তু কেউই গোল করতে পারেনি। এই ম্যাচে অনেকটা মনে হয়েছে ফাউলের ম্যাচ।
এই ম্যাচে মোট ফাউলের সংখ্যা ছিল ৪১ টি। যার মধ্যে হলুদ কার্ড ছিল ৪টি এবং রেড কার্ড ১টি। ম্যাচের ৭৪ মিনিটে উরুগুয়েয়ান মিডফিল্ডার নাহিতাস নান্দেজ রেড কার্ড দেখেন। ম্যাচে মোট অন টার্গেট শর্ট ছিল ব্রাজিলের ৩টি এবং উরুগুয়ের ১টি।
পজিশনের ক্ষেত্রে ব্রাজিলের আধিপত্য লক্ষ্য করা যায়। ব্রাজিলের পায়ে বলছিল ৬০%, অপরদিকে উরুগুয়ের পায়ে বলছিল ৪০%। ট্রাইবেকারে গোল দিয়ে শুরু করে উরুগুয়ে। উরুগুয়ের হয়ে প্রথম শটে গোল করেন ফ্রেডরিকো ভালবার্দে। বিপরীতে ব্রাজিলের প্রথম শর্ট এর গোল মিস করে ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার এডার মিলিটাও। এডার মিলিটাও এর শর্ট ঠেকিয়ে দেন উরুগুয়ের গোলকিপার সারজিও রসেট।
এরপরে উরুগুয়ের হয়ে দ্বিতীয় শর্টে গোল করেন রোদ্রিগো ব্যান্টেনচুর। এবং দ্বিতীয় শর্টে ব্রাজিলের হয়ে গোল পান আন্দ্রেস পেরেইরা। আবারো স্বপ্ন জেগে ওঠে ব্রাজিল সমর্থকদের। উল্লাসে ফেটে পড়ে পুরো ব্রাজিলিয়ান গ্যালারি।
পরবর্তীতে উরুগুয়ের হয়ে তৃতীয় শর্ট নিতে আসেন জর্জিয়ান ডি আররাসকেটা। তার জোরালো শর্ট গোলে পরিণত হয়। ব্রাজিলের তৃতীয় শর্ট নিতে এসে ডগলাস লুইজ গোল পোস্টে মেরে দেন। যার ফলশ্রুতিতে ব্রাজিল ৩-১ এ পিছিয়ে পড়ে।
তারপরে এলিসন ব্রেকার চমৎকার একটি শট ঠেকিয়ে দেন উরুগুয়ের হোসে মারিয়া গিমেনেজ এর। এবং ব্রাজিলের হয়ে গোল করেন গ্যাব্রিয়েল মার্টিনেলি। কিছুটা আসার আলো দেখতে পায় ব্রাজিলিয়ান সমর্থকরা। কিন্তু সেটা বেশিক্ষণ টিকেনি।
পঞ্চম শটে উরুগুয়ের ম্যানুয়েল উগার্তে গোল করে দলকে টেনে নিয়ে যান সেমিফাইনালে। আশা ভঙ্গ হয় ব্রাজিলিয়ান শিবিরের। স্বপ্নভঙ্গের হতাশায় ডুবতে থাকে ডগলাস-মিলিটাওরা। ওদিকে জয়ের উল্লাসে ভেঙে পড়ে পুরো উরুগুয়েয়ান শিবির।
আগের ২ ম্যাচে হলুদ কার্ড এর কারণে খেলতে পারেননি ব্রাজিলিয়ান তারকা লেফট উইঙ্গার ভিনিসিয়াস জুনিয়র। তবে মাঠে বসে সরাসরি দলের খেলা উপভোগ করেছেন তিনি। তার আবর্তনে লেফট উইঙ্গে বেশ ভুগতে হয়েছে পুরো ব্রাজিল দলকে।
তবে ব্রাজিলের রোদ্রিগো, এন্দিক, রাপিনহারা তেমন কোন সুযোগ তৈরি করতে না পারলেও সুযোগ মিস করেছেন অনেকবার। তেমনি উরুগুয়ের বেশ কয়েকটি শর্ট গোলপোস্টের উপর দিয়ে গিয়েছেন। ২য় আর্ধে ব্রাজিল তেমন গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি।
তবে ম্যাচের ৮৫ মিনিটে ২০ গজ দূর থেকে এন্দ্রিক একটি শর্ট নেয়। শর্টের জোর কম থাকায় উরুগুয়ের গোলকিপার সেটিকে তালু বন্দি করে ফেলে। এরপরে ব্রাজিল অনেকগুলো পরিবর্তন করে কিন্তু কিছুতেই যেন তাদের গোল খরা কাটছিল না।
আজকের ম্যাচে উরুগুয়ে যথেষ্ট ভালো খেলেছে। ৭৪ মিনিটে নাহিতাস নান্দেজ লাল কার্ড দেখার পরে উরুগুয়েকে ১০ জনের দল নিয়ে ভালো ডিফেন্সিভ ফুটবল খেলতে দেখা গেছে। এবং তারা যথেষ্ট আক্রমণের চেষ্টা করেছে। জেনে নিন – বিশ্বের সেরা ফুটবলার কে?