বক্সিং খেলার সাথে কম বেশি সকলে পরিচিত। বক্সিং তথা মুষ্টিযুদ্ধ এমন খেলা যেখানে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী হাতে গ্লাভস পরে নির্দিষ্ট একটি সময়ের মধ্যে একে অপরকে আঘাত করে এবং আঘাত প্রতিহত করে। চলুন জেনে নেই বক্সিং খেলার সম্পূর্ণ নিয়ম এবং পদ্ধতি সম্পর্কে।
বর্তমানে বাংলাদেশে বক্সিং খেলা বহুল পরিচিত। সবাই একসাথে বসে টিভিতে WWW এর বক্সিং খেলা উপভোগ করার আনন্দ অন্যরকম। কিন্তু বাংলাদেশের সচরাচর এই খেলা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় অনেকেই বক্সিং খেলার নিয়ম সম্পর্কে জানেন না।
বক্সিং খেলার নিয়ম
সাধারণত বক্সিং খেলায় ২ জন খেলোয়াড় থাকে। যারা একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে লড়াই করে। হাতের মধ্যে গ্লাভস লাগিয়ে একে অপরকে আঘাত করে এবং অন্যজন আঘাত প্রতিহত করে। এভাবে করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যে টিকে থাকতে পারবে সেই বিজয়ী হবে।
পেশাদার বক্সিং খেলায় প্রতিযোগিতাটি নির্দিষ্ট কয়েকটি রাউন্ডে ভাগ করা হয়। প্রতিটি রাউন্ড সাধারণত ৩ মিনিট দীর্ঘ হয়ে থাকে। প্রতি রাউন্ড শেষে খেলোয়াড়রা ১ মিনিটের বিরতি পাবে। তবে বক্সিং খেলা পেশাদার এবং অপেশাদার দুই ভাবে অনুষ্ঠিত হয়।
সাধারণত পেশাদার বক্সিং খেলার প্রতিযোগিতায় ৪ থেকে ১৫ রাউন্ড পর্যন্ত হয়ে থাকে। এবং অপেশাদার বক্সিং খেলা ৩ থেকে ৫ রাউন্ড নিয়ে গঠিত হয়। তবে অনেক সময় অঞ্চল ভেদে / রাজ্য ভেদে বক্সিং খেলার নিয়ম কিছুটা পরিবর্তিত হয়।
বক্সিং খেলার ফলাফল বিচারকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবং রেফারির নির্দেশ অনুযায়ী পরিচালিত হয়। নকআউট থেকেই বিজয়ী নির্ধারণ করা যাবে যদি প্রতিদ্বন্দ্বীকে একটি পাঞ্চ মেরে মেঝেতে ফেলে দেওয়া হয় ও প্রতিদ্বন্দ্বী ১০ সেকেন্ডের মধ্যে উঠতে না পারে।
রেফারি যদি মনে করে প্রতিদ্বন্দ্বী চোটের কারণে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেনা, তাহলে তিনি খেলা থামাতে পারেন। সেক্ষেত্রে অন্য বক্সারকে একটি টেকনিক্যাল নকআউট বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
আঘাতে যদি কোন বক্সারের শরীল কেটে যায় বা ক্ষত সৃষ্টি হয়, এবং ডাক্তার যদি খেলা চালিয়ে যাওয়ার উপযুক্ত নয় বলে মনে করেন সেক্ষেত্রে একটি টেকনিক্যাল নকআউট দেওয়া হবে। যদি কোনও খেলোয়ার লড়াই ছেড়ে দেয়, বা যদি তার কর্নার লড়াই বন্ধ করে দেয়, সেক্ষেত্রে অন্য খেলোয়ারকে টেকনিক্যাল নকআউট জয় দেওয়া হয়।
যদি কোন নকডাউন না থাকে তাহলে একজন ডাক্তার কিংবা রেফারি বক্সার বা প্রতিযোগীকে আহত ঘোষণা করতে পারে। এমনকি উক্ত ম্যাচটি ড্র হিসেবে ধরা হবে। বক্সিং খেলার জন্য অবশ্যই হাতে গ্লাভস পড়ে নিতে হবে। বক্সিং খেলার গ্লাভস সাধারণত চামড়া দিয়ে তৈরি হয়।
বক্সিং এর কোর্ট বা রিং একটি বর্গাকার, ১২ থেকে ২০ ফুট (৩.৭ থেকে ৬.১ মিটার) এবং প্রতিটি পাশে ৩ বা ৪ মোটা শক্ত দড়ি দ্বারা আবদ্ধ। প্রতিযোগিরা প্রাইজ মানির জন্য খেলায় অংশগ্রহণ করে থাকে। ১৯৭১ সালের পরে বাংলাদেশ প্রফেশনাল বক্সিং সোসাইটি (BPBC) গঠিত হয়।
অ্যামেচার এবং প্রফেশনাল বক্সিং এর পার্থক্য
বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বক্সিং অনেক আগে থেকে চলে এসেছে। তবে প্রথম দিকে অ্যামেচার বক্সিং থাকলেও স্বাধীনতার পরে প্রফেশনাল বক্সিং এর আবির্ভাব হয়। সাধারণত যারা ডিফেন্সের চাকরিতে রয়েছে (বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিডিআর, র্যাব, ইত্যাদি) এবং উপজেলা পর্যায়ের অনেক ক্লাব অ্যামেচার বক্সিং এর সাথে জড়িত। এটাকে অপেশাদার বক্সিং বলা যায়।
সাধারণত অ্যামেচার বক্সিং এ ৩ রাউন্ডের খেলা হয়ে থাকে। এবং এটি কাউন্ট হয় পয়েন্ট হিসেবে, খেলোয়াড় যত দ্রুত পয়েন্ট নিয়ে বিপক্ষকে ঘায়েল করতে পারবে। এবং প্রফেশনাল বক্সিং হচ্ছে লং রাউন্ডের খেলা। সাধারণত প্রফেশনাল বক্সিং ৪ থেকে ১৫ রাউন্ড পর্যন্ত খেলা হয়।
রিলেটেড পোস্টঃ ব্যাডমিন্টন খেলার নিয়ম কানুন।
প্রফেশনাল বক্সিং এর জন্য অনেক শক্তি এবং ধৈর্য এর প্রয়োজন। খেলোয়াড়কে অবশ্যই মেন্টালি স্ট্রং থাকতে হবে। প্রফেশনাল বক্সিং খেলার জন্য খেলোয়ারের বয়স অবশ্যই ১৮ বছরের বেশি হতে হবে। প্রফেশনাল বক্সিং এর ক্ষেত্রে পূর্ব বক্সিং অভিজ্ঞতা থাকা জরুরী।
যেহেতু প্রফেশনাল বক্সিং অনেক সময় ধরে খেলা হয় এবং অনেক শক্তির প্রয়োজন হয় সেহেতু, প্রথমদিকে প্রফেশনাল বক্সিং শুরু না করাই ভালো। প্রথমদিকে অ্যামেচার বক্সিং শুরু করে যখন ২-৩ বছরের অভিজ্ঞতা হবে, এবং খেলোয়াড়ের মেন্টালিটি স্ট্রং হবে তখন প্রফেশনাল বক্সিং শুরু করা উত্তম।
উপসংহার
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, আশা করি বক্সিং খেলার নিয়ম এবং অ্যামেচার এবং প্রফেশনাল বক্সিং এর পার্থক্য সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। বক্সিং একটি ঝুঁকিপূর্ণ খেলা। তাই সম্পূর্ণ প্র্যাকটিস কিংবা পদ্ধতি, নিয়ম মেনে এই খেলাটি চালিয়ে যাওয়া উচিত।
আপনার যদি প্রফেশনাল বক্সার হওয়ার ইচ্ছে থাকে তাহলে আস্তে আস্তে বক্সিং প্র্যাকটিস করুন এবং বক্সিং খেলার সম্পূর্ণ নিয়মকানুন ফলো করুন। প্রথমদিকে প্রফেশনাল বক্সিং না খেলা উত্তম। অ্যামেচার থেকে শুরু করে আস্তে আস্তে প্রফেশনাল বক্সিংয়ের দিকে শিফট হওয়া ভালো।
FAQs
বক্সিং খেলাটি কে উদ্ভাবন করেন?
বক্সিং খেলা উদ্ভাবন করেন থিসিয়াস।
সুর কৃষ্ণ চাকমা কে?
এশিয়ান বক্সিং ফেডারেশনের ইন্টারকন্টিনেন্টাল চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথমবারের মতো বেল্ট জিতেছেন বাংলাদেশের পেশাদার বক্সিংয়ের চ্যাম্পিয়ন বক্সার সুর কৃষ্ণ চাকমা।