বর্তমানে জনপ্রিয় খেলা গুলোর মধ্যে বাস্কেটবল অন্যতম। ১৮৯১ সালে সর্বপ্রথম বাস্কেটবল খেলার জন্ম হয়। জেমস নেইস্মিথ একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শারীরিক শিক্ষা সাবজেক্টের শিক্ষক হিসেবে ছিলেন। তার শিক্ষার্থীদের জন্য প্রথম বাস্কেটবল খেলা আবিষ্কার করেন। চলুন বাস্কেটবল খেলার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেই।
ফুটবল ক্রিকেটের মতো এতটা জনপ্রিয় না হলেও বাস্কেটবল আমেরিকা এবং এশিয়ায় বেশ জনপ্রিয়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাস্কেটবল খেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যথাযথ ডিমান্ড রয়েছে বাস্কেটবলের।
তবে জেমস নেইস্মিথ এর আবিষ্কার করা বাস্কেটবল এবং বর্তমানে বাস্কেটবলের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। সময়ের সাথে সাথে ও মানুষের চাহিদা অনুযায়ী বাস্কেটবলের নিয়মে কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। এই লেখাটিতে আমরা বাস্কেটবল খেলার সম্পূর্ণ পদ্ধতি এবং নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করবো।
বাস্কেটবল খেলার নিয়ম
১০ মিনিট করে ৪ ভাগে মোট ৪০ মিনিট বাস্কেটবল খেলা হয়। ৬.২৫ মিটার দাগের ভেতর থেকে কোন দল স্কোর করলে ২ পয়েন্ট পাবে। এবং ৬.২৫ মিটার দাগের বাহির থেকে স্কোর করলে ওই দল ৩ পয়েন্ট পাবে। ফ্রি থ্রো থেকে স্কোর করলে ১ পয়েন্ট পাবে।
সাধারণত বাস্কেটবল ২ দলের মধ্যে খেলা হয়ে থাকে। খেলার মাঠে এক এক দলের ৫ জন খেলোয়াড় খেলতে পারবে। সর্বমোট একটি দলে ১২ জন খেলোয়াড় থাকে। ১০ মিনিট করে মোট ৪ টি ভাগে (৪x১০ = ৪০ মিনিট) খেলা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রিয় পাঠক, আপনাদের সুবিধার্থে বাস্কেটবল খেলার সম্পূর্ণ নিয়মাবলী নিচে স্টেপ আকারে উল্লেখ করা হলো।
- বাস্কেট বলের কোর্ট বাধামুক্ত শক্ত এবং সমতুল্য হবে।
- আন্তর্জাতিক খেলায় বাস্কেটবলের কোর্টের দৈর্ঘ্য ২৮ মিটার এবং প্রস্থ ১৫ মিটার হবে।
- এবং আঞ্চলিক খেলায় সাধারণত বাস্কেট বলের কোর্টের দৈর্ঘ্য হবে ২৬ মি. এবং প্রস্থ ১৪ মিটার রাখা হয়।
- কোর্টের মাঝে ১.৮০ মিটার ব্যাসার্ধের মোট ৩টি বৃত্ত থাকবে।
- এন্ডলাইনের কেন্দ্রবিন্দু থেকে উভয় দিকে ১.৮০ মিটার করে মোট ২ টি চিহ্ন দিতে হবে। এন্ডলাইনের মধ্যখান থেকে সামনের দিকে ৫.৮০ মিটার নিয়ে, উভয় দিকে মোট ১.৮০ মিটার নিয়ে, ৩.৬০ মিটার দাগের দুই মাথায় সমান দাগ টানতে হবে। এই জায়গাকে সংরক্ষিত এলাকা বলা হয়।
- বাস্কেট বলের আকার হয় গোলাকার। বলের পরিধি ৭৪.৯-৭৮ সে.মি। এবং ওজন ৫৬৭ গ্রাম থেকে ৬৫০ গ্রাম হয়ে থাকে।
- সাধারণত বাস্কেটবলের রং কমলা কালার হয়। বাস্কেট বলের উপরে মোট ৮টি প্যানেল থাকবে। এই বলের উপরের অংশ চামড়া, সিন্থেটিক বস্তু অথবা রাবার দিয়ে তৈরি হয়।
- কোর্ট থেকে রিং এর উচ্চতা ৩.০৫ মিটার হয়। রিং এর ব্যাসার্ধ ৪৫ সেন্টিমিটার। রিংয়ের সাথে নেট লাগানো থাকলে এর দৈর্ঘ্য হবে ৪০ সেন্টিমিটার। সাধারণত বোর্ড থেকে ১৫ সেন্টিমিটার দূরে রিং লাগানো হয়।
- ৬.২৫ মিটার দাগের ভেতর থেকে কোন দল স্কোর করলে ২ পয়েন্ট পাবে। এবং ৬.২৫ মিটার দাগের বাহির থেকে স্কোর করলে ওই দল ৩ পয়েন্ট পাবে। ফ্রি থ্রো থেকে স্কোর করলে ১ পয়েন্ট পাবে দলটি।
- টস এর মাধ্যমে বিজয়ী দল তাদের পছন্দের কোর্ট বেছে নিবে। রেফারি কোর্টের মাঝখানে দাঁড়িয়ে বল শূন্যে ছুঁড়ে দেয়ার মাধ্যমে খেলা শুরু করবে।
- বাস্কেটবল খেলার সময় মোট ৪০ মিনিট। ১০ মিনিট করে মোট ৪ টি পর্বে খেলা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি পর্বের পরে ২ মিনিট বিরতি থাকবে। খেলার মাঝে বিরতি মোট ১৫ মিনিট।
- খেলা চলকালীন অবস্থায় একদলের খেলোয়াড়রা ২৪ সেকেন্ড বল নিজেদের মধ্যে রাখতে পারবে।
- ৮ সেকেন্ডের মধ্যে বিপক্ষ দলের কোটে বল নিতে হবে।
- রেফারি সংকেত দেওয়ার পরে ৫ সেকেন্ডের মধ্যে বল থ্রো করতে হবে। উভয় দলের খেলোয়াড় ৫ সেকেন্ডের বেশি বল টানাটানি করতে পারবে না। বল ধরার পরে ৫ সেকেন্ডের মধ্যে অবশ্যই ড্রিবল / পাস করতে হবে। ৫ সেকেন্ডের বেশি কোন খেলোয়াড় বল ধরে রাখতে পারবে না।
- বল নিয়ন্ত্রণ করা দলের যেকোন খেলোয়াড় ৩ সেকেন্ডের বেশি সংরক্ষিত এলাকায় বল ছাড়া থাকতে পারবে না।
- খেলার যেকোন ধরনের নিয়ম ভঙ্গ করলে কিংবা ফাউল করলে ভায়লোশন হিসেবে গণ্য হবে।
- খেলা চলাকালীন অবস্থায় বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়ের সাথে নিয়ম ভেঙ্গে সংঘর্ষ হলে ব্যক্তিগত ফাউল হিসেবে গণ্য হবে।
- ম্যাচ অফিসিয়ালদের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহার এবং ইচ্ছাকৃতভাবে খেলার রুলস ভঙ্গ করলে টেকনিক্যাল ফাউল হিসেবে গণ্য হবে।
- উভয় দলের খেলোয়াড় একসাথে ফাউল করলে বা সংঘর্ষে জড়ালে ডাবল ফাউল হিসেবে গণ্য হবে।
- পুরো ৪০ মিনিটের খেলায় কোন খেলোয়াড় ৫ বার ফাউল করলে তাকে অবশ্যই কোর্ট ত্যাগ করতে হবে।
- কোন খেলোয়াড় স্বইচ্ছায় বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়কে আঘাত করলে ইচ্ছাকৃত ফাউল হিসেবে গণ্য হবে।
- কোনো দল প্রতি অর্ধে ৭টি যেকোনো ফাউল করলে এবং ৪০ মিনিটের খেলায় প্রতি পর্বে ৪টি ফাউল করলে, পরবর্তী ফাউলের জন্য বিপক্ষ দলকে ২টি ফ্রি থ্রো দেওয়া হবে। যে ফাউলের শিকার তিনি ফ্রি থ্রো মারবেন।
সম্পর্কিত লেখাঃ বক্সিং খেলার নিয়ম এবং পদ্ধতি।
বাস্কেটবল খেলার পদ্ধতি ও কৌশল
বাস্কেটবল একটি দমের খেলা। একজন ভালো বাস্কেটবল খেলোয়াড় হওয়ার জন্য অবশ্যই দক্ষতা, ক্ষিপ্রতা, গতি ও লাফ দেওয়ার ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন। চলুন বাস্কেটবল খেলার কিছু কৌশল ও পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নেই।
- বল ধরার স্টাইল – অবশ্যই আঙ্গুলের উপরিভাগ দিয়ে বল ধরতে হবে। এবং বল ধরার সময় বলটিকে সম্পূর্ণ নিজের অধীনে নিয়ে আসতে হবে।
- দাঁড়াবার স্টাইল – নিজের সুবিধামতো দু’পা সামান্য ফাক করে সামনের দিকে ঝুঁকে দাঁড়াতে হবে। সম্পূর্ণ কমফোর্টেবল অবস্থায় দাঁড়ানোর প্র্যাকটিস করতে হবে।
- বল পাস দেওয়ার ক্ষমতা – বাস্কেটবল খেলায় বল পাস দেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাধারণত বল পাস দেওয়ার সময় এক পা সামনের দিকে এবং আরেক পা পিছনের দিকে থাকে।
- ড্রিবলিং দক্ষতা – জায়গা পরিবর্তন করা কিংবা বল নিয়ে সামনের দিকে আগানোর জন্য বাস্কেটবল খেলায় ড্রিবলিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভালো খেলোয়াড় হবার জন্য অবশ্যই ড্রিবলিং দক্ষতা থাকতে হবে।
- শুটিং দক্ষতা – সঠিক জায়গায় বাস্কেটবল শুট করার দক্ষতা প্রয়োজন। বল হাত থেকে ছুড়ে ফেলাকে শুটিং বলা হয়।
- পিভটিং দক্ষতা – পায়ের উপর ঘোরাকে পিভটিং বলা হয়। এক পা স্থির রেখে অন্য পা ইচ্ছেমতো ঘুরিয়ে নেয়াকে পিভটিং বলা হয়।
একজন ভালো বাস্কেটবল খেলোয়াড় হওয়ার জন্য অবশ্যই আপনার বল ধরার স্টাইল, দাঁড়াবার স্টাইল, বল পাস দেওয়ার ক্ষমতা, ড্রিবলিংয়ে দক্ষতা, শুটিং দক্ষতা এবং পিভটিং দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। কেননা বাস্কেটবল খেলার মূল কৌশল এগুলি।
বাস্কেটবল খেলার উপকারিতা
বাস্কেটবল এক ধরনের ব্যায়াম। যেহেতু এই খেলায় প্রচুর শক্তি অপচয় করতে হয়, সেহেতু এটি শরীরের জন্য বেশ উপকারী। বাস্কেটবল খেলা শরীর ও মন ভালো করে স্বাস্থ্য উন্নতি ঘটায়। চলুন বাস্কেটবল খেলার কিছু উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেই।
- হার্ট এবং কার্ডিওভাসকুলার উন্নত করে।
- ক্যালোরি কমায়।
- ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- পেশির সহ্য ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- সুস্থ হাড় তৈরি করে।
- ভারসাম্য এবং সমন্বয় উন্নত করে।
- মৌলিক আন্দোলনের ক্ষমতায় বিকাশ ঘটায়।
- শারীরিক গঠন উন্নত করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে।
- শরীর থেকে স্ট্রেস তথা চাপ কমায়।
- মানসিক বিকাশ বৃদ্ধি করে।
এছাড়াও বাস্কেটবল খেলায় রয়েছে আরো অনেক ধরনের উপকারিতা। সামাজিক সুবিধা গুলোর মধ্যে রয়েছে – দলগত মনোভাব বৃদ্ধি করে, যোগাযোগ দক্ষতা বিকাশ করে, আত্মশৃঙ্খলা এবং একাগ্রতা বৃদ্ধি করে। তাই শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য হলেও নিয়মিত বাস্কেটবল খেলা দরকার।
সম্পর্কিত লেখাঃ ব্যাডমিন্টন খেলার নিয়ম কানুন।
উপসংহার
সম্মানিত পাঠক বৃন্দ, আশা করি বাস্কেটবল খেলার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এছাড়াও আমরা এই আর্টিকেলের মধ্যে বাস্কেটবল সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের তথ্য উল্লেখ করার চেষ্টা করেছি। এই লেখাটি ভালো লাগলে আমাদের পরবর্তী লেখা দেখার জন্য অনুরোধ করা হলো।
বাংলাদেশে সর্বপ্রথম খ্রিস্টান মিশনারি স্কুলগুলোতে বাস্কেটবল খেলা শুরু হয়। যারমধ্যে ছিল – ঢাকার সেন্ট জোসেফ ও সেন্ট গ্রেগরী, চট্টগ্রামের সেন্ট প্লাসিড ইত্যাদি। এরপরে ১৯৭২ সালে Bangladesh Basketball Federation (BBF) গঠন করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে বাস্কেটবল বেশ জনপ্রিয়।
FAQs
বাস্কেটবল কত মিনিটের খেলা?
বাস্কেটবল মোট ৪০ মিনিটের খেলা। ১০ মিনিট করে ৪ টি পর্বে এই খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এবং প্রতি পর্বের শেষে ২ মিনিট বিরতি থাকে।
বাস্কেটবল খেলায় কতজন খেলোয়াড় থাকে?
বাস্কেটবল খেলায় মোট ১২ জন খেলোয়াড় থাকে। উভয়দল থেকে ৫ জন করে খেলোয়ার একসাথে কোর্টে থাকে।
বাস্কেটবলের উপর কয়টি প্যানেল থাকবে?
বাস্কেটবলের উপর মোট ৮ টি প্যানেল থাকবে। এর ওজন ৫৬৭ গ্রাম থেকে ৬৫০ গ্রাম পর্যন্ত থাকে।