ক্রিয়াপ্রেমীদের মাঝে ব্যাডমিন্টন একটি জনপ্রিয় খেলা। বাংলাদেশ এবং ইন্ডিয়ায় এই খেলাটি বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে শীতের সময়ে অবসর সময় কাটানোর জন্য এবং বিনোদনের উদ্দেশ্যে এই খেলাটি উপভোগ করা হয়। চলুন জেনে নেই ব্যাডমিন্টন খেলার নিয়ম সম্পর্কে।
ব্যাডমিন্টন খেলার উন্নয়নের লক্ষ্য এবং জাতীয় পর্যায়ে এই খেলা আয়োজনের উদ্দেশ্যে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন গঠন করা হয়। ইতিমধ্যে ব্যাডমিন্টন একটি প্রতিযোগিতামূলক খেলা হিসেবে বাংলাদেশে ও ইন্ডিয়ার কিছু অংশে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ দল সমান তালে প্রতিযোগিতা করছে। তাই আপনি যদি এখনো ব্যাডমিন্টন খেলার সম্পূর্ণ নিয়ম সম্পর্কে জেনে না থাকেন, তাহলে এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ আপনার দেখা উচিত।
ব্যাডমিন্টন খেলার নিয়ম
প্রথমে Toss করে বিজয়ী দল কোর্ট নির্ধারণ করবে। সর্বমোট ২১ পয়েন্টের তিনটি গেম অনুষ্ঠিত হয়। কোন পয়েন্ট না হওয়া পর্যন্ত খেলোয়াড়রা তাদের কোর্ট বদল করতে পারবে না। প্রতি গেম শেষে কোর্ট বদল করতে হবে।
এভাবে করে ব্যাডমিন্টন খেলার সম্পূর্ণ নিয়ম বুঝতে একটু কঠিন হবে। আপনাদের সুবিধার্থে নিচে ব্যাডমিন্টন খেলার সম্পূর্ণ পদ্ধতি স্টেপ বাই স্টেপ উল্লেখ করা হলো।
- প্রথমে টসে বিজয়ী দল তাদের পছন্দমত কোর্ট সিলেক্ট করে ফেদার সার্ভ করবে।
- এবং বিপরীত দল ফেদার রিসিভ করার মাধ্যমে খেলা শুরু হবে।
- যেকোনো ধরনের খেলায় ২১ পয়েন্টের মোট ৩টি গেইম অনুষ্ঠিত হবে।
- ১ম গেমের বিজয়ী দল ২য় গেমের শুরুতে ফেদার সার্ভ করবে। একইভাবে বিপরীত দল ফেদার রিসিভ করার মাধ্যমে ২য় গেমের খেলা শুরু করতে হবে।
- ফেদার কোনভাবে নেটের উপর দিয়ে কিংবা নেট স্পর্শ করে বিপরীত কোর্টএ পৌঁছালে, সঠিক সার্ভ হিসেবে গণ্য হবে।
- ২ দলের পয়েন্ট সমতা থাকলে এই অবস্থাকে ডিউস বলা হয়। এই ধরনের সিচুয়েশনে যেকোনো ১ দলকে ২ পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে থেকে খেলা শেষ করতে হবে। এবং এই ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩০ পয়েন্টের মধ্যে উক্ত গেম শেষ করতে হবে।
- প্রতি গেমের শেষে ২ মিনিট বিরতি নেওয়া হয়। এবং ম্যাচের পয়েন্ট ১১ তে পৌঁছালে ১ মিনিট বিরতি নেওয়া হয়।
- কোন পয়েন্ট না হওয়া পর্যন্ত খেলোয়াড়রা নিজেদের কোর্ট বদল করতে পারবে না।
- ফেদার সার্ভ করার সময় অবশ্যই খেলোয়াড়ের দুই পা মাটিতে অবস্থানরত থাকতে হবে।
- খেলা চলাকালীন সময়ে খেলোয়াড়রা শরীরের কোন অংশ দিয়ে নেট স্পর্শ করতে পারবে না।
- এবং কোর্টের মাঝখানের নেট ক্রস করে খেলোয়াররা ফেদারে আঘাত করতে পারবে না।
- প্রতি গেম শেষে অবশ্যই বাধ্যতামূলকভাবে খেলোয়াড়দের কোর্ট পরিবর্তন করতে হবে।
- এবং তৃতীয় গেমে ১১ পয়েন্ট হওয়ার পর কোর্ট পরিবর্তন / বদল করতে হবে।
- দ্বৈত খেলায়ঃ ফেদার সার্ভের সময় ডান পাশের খেলোয়াড় কোনাকুনি ভাবে বাম পাশে ফেদার সার্ভ করবে।
- খেলায় পয়েন্ট জোড়া হলে ডানের কোর্ট হতে সার্ভ করতে হবে, এবং বিজোড় হলে বামের কোর্ট হতে সার্ভ করতে হবে।
- একক খেলায়ঃ সার্ভকারীর পয়েন্ট বিজোড় হলে বাম দিকের কোর্ট থেকে এবং শূন্য বা জোড় হলে খেলোয়াড় ডান দিকের কোর্ট থেকে সার্ভ শুরু করবে।
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, এই ছিল ব্যাডমিন্টন খেলার সম্পূর্ণ নিয়মাবলী। তবে গ্রাম গঞ্জে নিজেদের সুবিধার্থে অনেক ধরনের নিয়ম বাতলে দেয়া হয়। তবে সঠিকভাবে ব্যাডমিন্টন খেলার পদ্ধতি উপরে বিস্তারিত আকারে উল্লেখ করা হয়েছে।
সাধারণত ব্যাডমিন্টন খেলায় ২ জন করে ২ দলে মোট ৪ জন খেলোয়াড় থাকে। মহিলা কিংবা পুরুষ উভয়ই ব্যাডমিন্টন খেলায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। তবে ব্যাডমিন্টন খেলার দল গোছানো মোট ৫টি পদ্ধতিতে হয়ে থাকে। যেমনঃ
- মহিলা একক
- পুরুষ একক
- মহিলা দ্বৈত
- পুরুষ দ্বৈত
- মহিলা ও পুরুষ মিশ্র
রিলেটেড আর্টিকেলঃ লাইভ ক্রিকেট স্কোর বল বাই বল দেখার নিয়ম।
ব্যাডমিন্টন খেলার সরঞ্জাম
ব্যাডমিন্টন খেলা উপভোগ করার জন্য অবশ্যই আপনাদের নির্দিষ্ট কিছু প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম থাকতে হবে। সরঞ্জামগুলো হলঃ
- ব্যাডমিন্টন ব্যাট
- ফেদার / শাটল
- ব্যাডমিন্টন নেট
- ব্যাডমিন্টনের পোস্ট বা খুঁটি
- ব্যাডমিন্টন কোর্ট
- রাতে খেলা হলে প্রয়োজনীয় আলোর ব্যবস্থা
- তাছাড়া আন্তর্জাতিক খেলায় খেলোয়ারদের বিভিন্ন ড্রেস এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী থাকে।
ব্যাডমিন্টন কোর্টের সঠিক মাপ
ব্যাডমিন্টন কোর্টের আয়তন সাধারণত ৮১.৮০১ বর্গ মিটার হয়ে থাকে। সঠিকভাবে খেলা উপভোগ করার জন্য অবশ্যই একটি সুনির্দিষ্ট মাপের ব্যাডমিন্টন কোর্ট প্রয়োজন। চলুন জেনে নেই ব্যাডমিন্টন কোর্টের সঠিক মাপ সম্পর্কে।
- কোর্টের লাইনের বাহির পাশ থেকে ধরে ব্যাডমিন্টন খেলার কোর্টের দৈর্ঘ্য ৪৪ ফুট এবং প্রস্থ ২০ ফুট হবে।
- সিঙ্গেল খেলার জন্য ব্যাডমিন্টন কোর্টের দৈর্ঘ্য ৪৪ ফুট এবং প্রস্থ ১৭ ফুট। দুই পাশের লাইনের প্রস্থ ১.৫ ফুট করে।
- নেট থেকে সামনের দিকের সার্ভিস লাইনের দূরত্ব ৬.৫ ফুট করে মোট ১৩ ফুট হবে।
- ডাবলসের ২টা সার্ভিস লাইনের মধ্যকার দূরত্ব হবে ২.৫ ফুট করে হবে।
- সামনের সার্ভিস লাইন থেকে ডাবলসের পিছনের সার্ভিস লাইন পর্যন্ত ১৩ ফুট।
- মাঝখানের লাইন থেকে সাইডের লাইনের মাপ হবে সাড়ে ৮ ফুট।
- এবং মাঝখানের নেটের উচ্চতা হবে দুই পাশে ৫.১ ফুট এবং নেটের মাঝ বরাবর উচ্চটা হবে ৫ ফুট।
- কোর্টের চারপাশে কিছু ফাঁকা জায়গা রেখে দিবেন যাতে রেকেট ব্যাট কিংবা ফেদার বাইরের অন্য কিছুতে আঘাত না লাগে।
ব্যাডমিন্টন খেলার পয়েন্ট হিসাব
ব্যাডমিন্টন খেলায় সাধারণত ২১ পয়েন্টের তিনটি গেম অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবার সার্ভ করলে ১টি পয়েন্ট যুক্ত হয়। কোন পক্ষ রেলি জিতলে তার স্কোরের সাথে ১ পয়েন্ট যুক্ত করা হয়। ২১ পয়েন্টের খেলার শেষে যে পক্ষ সর্ব প্রথমে ২ পয়েন্ট লিড নিয়েছিল সেই পক্ষই জিতবে।
এবং ২৯ পয়েন্টের খেলা শেষে যে পক্ষ ৩০ নং পয়েন্টটি করতে পারবে সেই পক্ষ জিতবে। সাধারণত এভাবে করে ব্যাডমিন্টন খেলার পয়েন্ট হিসাব করা হয়। প্রথম গেমে যে পক্ষ পয়েন্ট জিতবে পরবর্তীতে সেই পক্ষ প্রথমে ফেদার সার্ভ করবে।
উপসংহার
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, আশা করি ব্যাডমিন্টন খেলার নিয়ম এবং ব্যাডমিন্টন খেলার সামগ্রী, ব্যাডমিন্টন কোর্টের সঠিক মাপ, ব্যাডমিন্টন খেলার পয়েন্ট এর হিসাব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। সাধারণত বর্তমানে এই নিয়মে ব্যাডমিন্টন খেলা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
অন্যান্য সকল খেলার সাথে প্রতিযোগিতা করে বর্তমান বিশ্বে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাডমিন্টন খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এবং সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ অন্যান্য দলগুলোর সাথে প্রতিযোগিতা করে সমানতালে এগিয়ে চলছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের খেলা প্রেমীদের কাছে ব্যাডমিন্টন খেলা শীতকালে অনেক জনপ্রিয়।
FAQs
ব্যাডমিন্টন কোন দেশের জাতীয় খেলা?
ব্যাডমিন্টন ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় খেলা। তবে বর্তমানে পৃথিবীর অনেক দেশে ব্যাডমিন্টন খেলাটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
ব্যাডমিন্টন এর নেট এর উচ্চতা?
ব্যাডমিন্টন এর নেট এর উচ্চতা হবে ৫ ফুট ১ ইঞ্চি। অনেক ক্ষেত্রে এর উচ্চতা ৫ ফুট রাখা হয়।
ব্যাডমিন্টন খেলার জন্ম কোথায়?
ব্যাডমিন্টন খেলার জন্ম ইংল্যান্ডে। ভারতে নিযুক্ত ব্রিটিশ সেনা অফিসারেরা সর্বপ্রথম ব্যাডমিন্টন খেলা উদ্ভাবন করেন।